এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইনাতগঞ্জ। গতকাল সোমবার ওই এলাকায় কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সাথেও বিক্ষুব্ধ জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, বিজিবির কর্নেল সাজ্জাদুর রহমান ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ সফিউল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে খন্ডখন্ড মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা ইনাতগঞ্জ বাজারে
জড়ো হয়ে রজত রায়ের ফাঁসির দাবীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে মিছিলটি মধ্যসমেত গ্রামস্থ রজত রায়ের বাড়ীর দিকে গিয়ে ওই গ্রামের ৪টি বাড়িতে ঢিল ছুড়ে। এতে অভিজিৎ রায়, সঞ্জয় রায়, শুভাষ রায়, গোবিন্দ রায় এর বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা ফের মিছিল নিয়ে বাজারের দিকে আসার সময় নারায়ন নামের এক স্বর্ণকার মিছিলটি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এর পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। দুপুর ২টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতাদের নিয়ে স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন। এতে বক্তব্য রাখেন, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, বিজিবির কর্নেল সাজ্জাদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উপ-সচিব) সফিউল আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার, থানার ওসি এস.এম আতাউর রহমান, সহকারী কমিশনার ভূমি জীতেন্দ্র কুমার নাথ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বজলুর রশীদ, মুহিবুর রহমান হারুন, সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমেদ জিহাদী, আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান প্রমুখ।
এসময় বিক্ষোভকারীরা মিছিলে ঢিল নিক্ষেপকারী স্বর্নকার নারায়নের গ্রেফতারের দাবী জানান। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অপরাধী যেই হোক, আইনের উর্ধে কেউ না। ঘটনার পরপরই দোষী রজত রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এবং প্রচলিত আইনে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত ডিআইজি বিক্ষোভকারীদের আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, অপরাধ করেছে একজন তার শাস্তি হবে নিশ্চিত, কিন্তু আপনারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে কেউ অপরাধী হবেননা। এসময় বিক্ষোভকারীরা প্রচলিত আইনে দোষী রজতের শাস্তি না দিয়ে তাকে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তার বিচারের দাবী জানান।
এদিকে এ ঘটনায় রোববার রাতেই নবীগঞ্জ থানার এস আই মোবারক হোসেন বাদী হয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। থানার ওসি এস.এম আতাউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত রজত স্বীকারোক্তি দেয়ায় গতকাল সোমবার সকালে রিমান্ড আবেদন না করেই আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপর দিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইনাতগঞ্জ বাজার ও আশপাশ এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন র্যাব, দশ প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তৎপর রয়েছেন। তারা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে এবং হিন্দু বাড়ি ঘরের আশ পাশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন।
এদিকে ইনাতগঞ্জ ছাড়াও রজতের ফাঁসির দাবীতে নবীগঞ্জ উপজেলা সদর, কাজির বাজার, বড় ভাকৈরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমান বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যেকোন অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম বলেন, অপরাধীকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার ইনাতগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মধ্যসমত গ্রামের মৃত রন রায়ের পুত্র রজত রায় পবিত্র ক্বাবা শরীফের ছবির উপর হনুমানের মুর্তির ছবি প্রতিস্থাপন করে ফেসবুকে আপলোড করে। ধর্মপ্রাণ মানুষ এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসলে পুলিশ রজত রায়কে চন্ডিপুর গ্রামের আখল উল্লার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।