এক্সপ্রেস রিপোর্ট ॥ এসএ পরিবহন ও অধুনা এসএ টিভির স্বত্বাধিকারী সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে অবৈধভাবে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় রেলওয়ে পুলিশের এসপি মোস্তফা কামালকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
২০০৩ইং সালে এস এ পরিবহনের মালিক সালাউদ্দিন আহমেদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উদ্ভুত স্পেশাল কেছ নং- ৩৯/২০০৪ইং, মেট্রোপলিটান স্পেশাল কোর্ট এবং কমপ্লেইন পিটিশন নম্বর- ৩৭৯৫/২০০৩ইং, মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ঢাকা, যা স্পেশাল মামলা নং- ০১/২০১০ইংএ অভিযুক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩নং স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন তাকে দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায় এ দন্ডে দন্ডিত করেন। যাবজ্জীবন কারাদন্ডের অতিরিক্ত তাকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাকে আরও এক বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। জরিমানার টাকা বর্তমান বা ভবিষ্যত অর্জিত সম্পদ হতে আদায় করে ৫ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার এবং ২৫ লাখ টাকা ফরিয়াদীকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ওই এসপিকে দন্ডবিধির ১৬১, ১৬৭ পঠিতব্য প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট এর ৫(২) ধারার অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। এ মামলায় অপর অভিযুক্ত এসআই ওয়াহেদ মিয়াকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আদালত ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করে এ দণ্ডাদেশ দেন। ২০০৩ সালের ২০ নভেম্বর এস এ পরিবহনের স্বত্ত্বাধিকারী সালাহ উদ্দিন আহমদ নীলফামারী পার্বত্যপুর রেলওয়ের পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ও এসআই ওয়াহেদ মিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন। ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ মোতাহার হোসেনের আদালতে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
বাদি মামলায় অভিযোগ করেন, ২০০২ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি নিজ গাড়িতে ২০ লাখ টাকা নিয়ে সিলেট যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হবিগঞ্জের মাধবপুরে তল্লাশির নাম করে পুলিশ গাড়িটি আটক করে। বাদি তার পরিচয় দিলে রাতে টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে থানার জিডি করতে বলেন। জিডি করতে থানায় হবিগঞ্জের তৎকালীন এসপি মোস্তফা কামাল এসএ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্যদের হাজতে ঢুকাতে ওয়্যারলেসে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, এরপর তাকে আটক করে তার নামে মানি লন্ডারিং, মাদক ও নারী ও শিশু নির্যানতন আইনে পৃথক ৩ টি মামলা করে। বাদি আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে আসামিগণ বাদির হেড অফিসে খবর পাঠায় আটককৃত ২০ লাখ টাকাসহ ৫০ লাখ টাকা দিলে সকলকে ম্যানেজ করে মামলাগুলো থেকে অব্যাহতি দিবে।
জামিনে মুক্তি পেয়ে সালাহউদ্দিন এসপি মোস্তফা কামালের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখান  থেকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বিগত ২০০৩ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন।
২০১০ সালের ৪ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। ঘটনাকালীন সময়ে তিনি হবিগঞ্জে এএসপি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নীলফামারিতে রেলওয়ে পুলিশের এসপি হিসাবে কর্মরত আছেন। বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী, অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক লাল এবং অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী এসএ পরিবহনের সত্বাধিকারী  সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। একজন ঘুষখোর পুলিশের শাস্তি দিতে পেরে আমি আজ আনন্দিত। এ মামলার রায় একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আসামি সরকারি কর্মচারী হয়েও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন- যা আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এসপি মোস্তফা কামাল বলেন, এটি মিথ্যা মামলা। আমি ন্যায় বিচার চাই।