এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জের কাজল পাল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম নারীকে বিয়ে করে দীর্ঘ একযুগ পর স্ত্রী সন্তানকে ফেলে এসে পুনরায় হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছেন। ১ম স্ত্রী কুমিল্লার রুবি আক্তার সন্তানকে সাথে নিয়ে স্বামীর খোঁজে নবীগঞ্জে এসে বিপাকে পড়েছেন।
কাজল পালের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের সুজাপুর গ্রামে। তার পিতার নাম কানু পাল। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাজল পাল প্রায় ১২ বছর পূর্বে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কুমিল্লা চলে যায়। সেখানে রসুলপুর বাজারে রিপন মিয়ার চা-ষ্টলে কাজ নেয় সে। কিছুদিন পর সে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কাজল পাল নাম পরিবর্তন করে সুমন মিয়া নাম ধারণ করে। পিতার নাম কানু পালের পরিবর্তে রাখা হয়েছে তালেব হোসেন, মাতার নাম লেখা হয় মাছুমা বেগম। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী সে সময় তার খৎনা কাজও সম্পন্ন হয়। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করায় চা-ষ্টলের মালিক রিপন মিয়া তার বাড়িতে থাকার জায়গা দেন। সেই সুযোগে আশ্রয়দাতার ভাতিজি আবু তাহেরের মেয়ে রুবি আক্তারের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে রুবি আক্তারকে বিয়ে করে সুমন। দীর্ঘ ৮ বছরে তাদের সংসার জীবনে এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বড় মেয়ে ইসাত জাহান সুচনা (৭) স্থানীয় কেতাশা সরকারী প্রাইমারী স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। ছোট ছেলে রাহাদ আহমদ মিনাজ এর বয়স ১৭ মাস। সেখানে স্বামী-স্ত্রী উভয় দর্জির কাজ করতো। সুমন মাঝে মধ্যে ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করতো। রুবি আক্তার জানান, প্রায় ৫/৬ মাস পূর্বে তার স্বামী ট্রাকের হেলপার হিসেবে সিলেটে আসলে আটকা পড়ে। ফোনে তাকে অসুবিধার কথা বলে ফোন দিতে বারণ করে। কিছু দিন পর ফিরে এসে দু’দিন অবস্থান করে ভাইয়ের অসুখের কথা বলে চলে আসে। সর্বশেষ ২১ ফেব্র“য়ারী কুমিল্লা এসে ব্যবসার কথা বলে ১০ হাজার টাকা এনে আর ফিরে যায়নি। ফোন নম্বারে ফোন দিলে সুইচ অফ পাওয়া যায়। অপেক্ষা করতে করতে সে ফিরে না যাওয়ায় গত সোমবার দু’অবুঝ সন্তানকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে নবীগঞ্জে আসেন রুবি আক্তার। শহরে তার স্বামীর দেয়া দোকানের ঠিকানা অনুযায়ী এসে স্বামীকে না পেয়ে স্থানীয় লোকজনকে সুমন নামে তার স্বামীকে খোঁজে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু লোকজন ওই নামে কাউকে ছিনেন না বলে জানালে রুবি তার কাছে থাকা স্বামীর ছবি দেখান। ছবি দেখে লোকজন সনাক্ত করেন তিনি সুজাপুর গ্রামের কানু পালের ছেলে কাজল পাল। লোকজনের সহযোগিতায় অসহায় রুবি আক্তার ছুটে যায় স্বামীর বাড়ি সুজাপুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী সুমন মিয়া কাজল পাল সেজে গত ৯ মার্চ সোমবার সিলেটের বালাগঞ্জে এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছে। বর্তমানে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সে শশুর বাড়ি বালাগঞ্জে অবস্থান করছে। গত মঙ্গলবার বাড়িতে ফিরে আসার কথা। কিন্তু এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কাজলের পরিবার তাকে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে রুবি। রুবি আক্তার তার নির্মম এই ঘটনাটি সুজাপুর গ্রামবাসীসহ সুমন মিয়া (কাজল পাল) এর চাচাতো ভাই কৌশিক পালকেও অবহিত করেছে। স্বামীর বাড়ি ঠাই না পেয়ে অবশেষে রুবি আক্তার স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার একই গ্রামের মতিউর রহমান কটনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে শত শত লোকজন ভীড় করছেন মেম্বারের বাড়িতে। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন গ্রামবাসী। গ্রামবাসী বলেন, কাজল পাল প্রায় ১০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম একটি মেয়েকে বিয়ে করে, স্ত্রী-সন্তান রেখে পুণরায় সনাতন ধর্ম অনুসরন করে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করার ঘটনাটি অস্বাভাবিক। গ্রামের লোকজন বলেন, এটা শুধু ওই মেয়ের সাথে প্রতারনা নয়, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করার সামিল। তারা জানান, প্রায় ১২/১৩ বছর পূর্বে ওই কাজল পালের বড় বোন এবং কানু পালের মেয়ে অর্চনা পাল ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে তাসলিমা বেগম নামে চট্রগ্রামে স্বামীর সাথে সংসার করছে। রুবি আক্তার বলেন, তাদের সংসার জীবনে তার স্বামী সুমন তাকে নিয়ে তার বোনের বাসায় চট্রগ্রামে একাধিক বার বেড়াতে নিয়ে গেছে। ওয়ার্ড মেম্বার মতিউর রহমান বলেন, সামাজিক ভাবে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছি। কাজল পাল ওরপে সুমন মিয়ার পরিবার সমাধানে এগিয়ে না আসলে গ্রামবাসীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিষয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন বলেও তিনি জানান। এ ব্যাপারে রুবি আক্তার বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরন করেই সুমন আমাকে বিয়ে করেছে। এবং ২০০৮ সালে কুমিল্লার রাজাপুর কর্মস্থলের ঠিকানায় সুমন এবং তার ছবিযুক্ত আইডি কার্ড হয়েছে। বিবাহের কাবিননামাসহ স্ত্রী সন্তানের সাথে সুমন মিয়া (কাজল পাল) এর ছবি রয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকালে বাবা বাড়ি এসেছে খবর পেয়ে বড় মেয়ে ইসাতজাহান সুচনা তাদের বাড়ি গিয়েছিল। কাজল পালের বাবা-মা তাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। সুমনের এ ধরণের প্রতারণায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।