নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটি নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা নোমান হোসেন ও দিলবার হোসেন মেম্বার ইনাতগঞ্জ বাজার পরিচালনা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে যে কোন সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হতে পারে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ইনাতগঞ্জ বাজার কমিটি নিয়ে চলছে ভানুমতির খেলা। ২০১৯ সালে ইনাতগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। উক্ত নির্বাচনে সভাপতি পদে দিলবার হোসেন মেম্বার, আমুন উদ্দিন ও সিরাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পদে নোমান হোসেন, আশাহিদ আলী আশা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের দিন দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়। এ সময় নির্বাচন প্রার্থী আমুন উদ্দিন আদালতে স্বত্ব মামলা (নং ১৫১/২০১৯ইং) দায়ের করেন। এরপর থেকে কমিটি বিহীন বাজার পরিচালনা করেন আওয়ামীলীগ নেতা দিলবার হোসেন ও যুবলীগ নেতা নোমান হোসেন। তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। ২০২২ সালে উক্ত স্বত্ব মামলা (নং ১৫১/২০১৯ইং) বিজ্ঞ আদালত খারিজ করলেও বাজার পরিচালনার জন্য কোন নির্বাচন না দিয়েই তারা বাজার পরিচালনা করে আসছিলেন। বিগত ১ নভেম্বর গ্রেফতার হন ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা নোমান হোসেন। পরে হবিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হবিগঞ্জ শহরে নিহত রিপন শীল হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ৮ জানুয়ারী মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। নোমান এলাকায় আসার পর বাজারে গ্রুপিং, লবিং শুরু হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।
এদিকে গত ৫ নভেম্বর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নান্টু রায় লাঞ্ছিত হন দিলবার হোসেনের লোকজনের হাতে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ফুসে উঠেন। ৮ নভেম্বর রাতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বাজার কমিটির এক জরুরী সাধারণ সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে জামায়াত নেতা মাসুদ আহমদকে সভাপতি এবং বিএনপি নেতা আব্দুল ওয়াহিদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট বাজার পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিতভাবে অবহিত ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহনের জন্য নবগঠিত কমিটি আবেদন করেন। কিন্তু দিলবার হোসেনগংরা খারিজ হওয়া স্বত্ব মামলা নং-১৫১/২০১৯ইং কপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলে তিনি বাজার কমিটি অনুমোদন দেননি। পরবর্তীতে ২০২২ইং সালে খারিজ হওয়া স্বত্ব মামলার আদেশের কপি দাখিল পুর্বক পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নির্বাহী অফিসারের বরাবরে আবেদন করেন নব গঠিত বাজার কমিটির সভাপতি মাসুদ আহমদ। এর প্রেক্ষিতে ১৯ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপম দাস অনুপ স্বাক্ষরিত এক পত্রে ইনাতগঞ্জ বাজারের বর্তমান কমিটিকে অনুমোদনের জন্য উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, হবিগঞ্জ বরাবরে পত্র প্রেরন করেন। এছাড়া পুর্বের ১৪/০১/২০২৫ইং তারিখে ইস্যুকৃত পত্রের কার্যক্রম বাতিল করেন। এবং কোন কার্যক্রম না করার জন্য ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করছেন না আওয়ামীলীগ নেতা দিলবার হোসেন ও যুবলীগ নেতা চেয়ারম্যান নোমান হোসেনগংরা। তারা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারী দাবী করে করছেন। এনিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারন করছে। যে কোন মুহুর্তে ইনাতগঞ্জ বাজারে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতে পারে।
এদিকে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নিয়মিত চাঁদা ও ঘরভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে আয় করেন প্রায় ৮৫ হাজার টাকা। পাহারাদারের বেতনসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় করে প্রায় ২০/২৫ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছেন। অথচ বিগত প্রায় ৬ বছরের আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব নেই। সাধারণ ব্যবসায়ীরা মনে করেন বিগত ৬ বছরে কম পক্ষে ১০/১২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। বাজারে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা দীর্ঘদিন ধরে বিকল। কমিটির কার্যালয়ের আসবাবপত্রেরও হদিস নেই।
এ ব্যাপারে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন বলেন, তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার সভাপতিত্বে সাধারণ সভায় ব্যবসায়ীরা সর্বসম্মতিক্রমে বাজার পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। যা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত। এটাই বৈধ কমিটি এবং তাদের মাধ্যমেই বাজার পরিচালিত হচ্ছে।
নব গঠিত কমিটির সভাপতি মাসুদ আহমদ বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীরা সর্ব সম্মতিক্রমে তাকে সভাপতি ও আব্দুল ওয়াহিদকে সাধারন সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট বাজার পরিচালনা কমিটি গঠন করেছেন। এই স্বল্পদিনে বাজারের আয় দেখে, তাদের ৬ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবের থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে জেনে আওয়ামীলীগের নেতারা নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাজার কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আশাহিদ আলী আশা বলেন, বাজারের বর্তমান আয়-ব্যয়ের হিসাব সন্তুষ্ট জনক। স্বল্প দিনে বাজারের যে সঞ্চয় দেখিয়েছেন তা প্রশংসার দাবী রাখে। দীর্ঘ ৬ বছরে বাজারের আয়-ব্যয়ের হিসাব পাচ্ছিনা। ৬ বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। তিনি প্রশাসনের মাধ্যমে উক্ত আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের কবল থেকে ইনাতগঞ্জ বাজার রক্ষার করার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নোমান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।